প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৩
দীর্ঘ সাড়ে চার বছর পর ব্রহ্মপুত্র তীরের নগরী ময়মনসিংহে আজ শনিবার আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নগরীর ঐতিহাসিক সার্কিট হাউস ময়দানে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দেবেন পথনির্দেশনা এবং বিভাগবাসীকে দেবেন উন্নয়নের বার্তা। সেইসঙ্গে উদ্বোধন করবেন ৭৩টি নতুন প্রকল্প, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন ৩০টি প্রকল্পের।
জানা যায়, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হতে যাওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে তিনটি ব্রিজ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি হল, আনন্দ মোহন কলেজে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট পাঁচতলা ছাত্রাবাস, সিটি করপোরেশনের সড়ক উন্নয়ন, ড্রেনেজ নেটওয়ার্কসহ নাগরিক সেবা উন্নতকরণ প্রকল্প উল্লেখযোগ্য। এই ৩০ প্রকল্পের ১৩টি ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন, পাঁচটি গণপূর্ত অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তিনটি করে, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর দুটি এবং জেলা পরিষদ, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড একটি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
এ ছাড়া এদিন উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে ছবির ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, পাঁচটি ব্রিজ, সদর উপজেলার সিরতা গ্রামে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ডা. মুশফিকুর রহমান শুভ মেমোরিয়াল ইসলামিক মিশন হাসপাতাল কমপ্লেক্স, ছয়তলা
ময়মনসিংহ জেলা সমাজসেবা কার্যালয়, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকার সড়ক, ড্রেন, সড়কবাতি স্থাপন, ময়মনসিংহ সদর উপজেলা পরিষদ নতুন হাসপাতাল নির্মাণ, গোবরাকড়া কড়ইতলী স্থলবন্দর উন্নয়ন, শেখ কামাল ইনডোর স্টেডিয়াম উল্লেখযোগ্য। মোট ৭৩টি প্রকল্পের মধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ৩১, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ২১, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন চারটি করে, গণপূর্ত অধিদপ্তর তিনটি, জেলা পরিষদ ও ময়মনসিংহ সদর উপজেলা দুটি করে এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবী সমিতি একটি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে প্রস্তুত ‘নৌকার ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত ময়মনসিংহ। পুরো নগরী সেজেছে নবরূপে। জনসভাকে জনসসুদ্রে রূপ দিতে সব প্রস্তুতিও শেষ। কয়েক স্তরের নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো শহর। টহল এবং তল্লাশি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা।
ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমনে এ অঞ্চলের সাংগঠনিক অবস্থা আরও শক্তিশালী হবে এবং নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা হবে। তার দেওয়া দিকনির্দেশনা আমাদের দলকে সুসংগঠিত করা এবং আগামী নির্বাচনে বিজয়ী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম জানান, আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সমাবেশ হলেও আমরা মহাজোটের অন্য দলগুলোকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারা মিছিল নিয়ে এ সমাবেশে যোগ দেবে বলে জানিয়েছেন।
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা কেন্দ্র করে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাদা পোশাকের গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তার খাতিরে প্রায় ৩ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। জেলা পুলিশের পাশাপাশি বাইরের জেলা থেকেও পুলিশ সদস্য আসবে। প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশ মঞ্চের প্রথম সারিতে নিরাপত্তায় থাকবে এপিবিএন। ট্র্যাফিকের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। নিরাপত্তার প্রশ্নে আমরা কোনো ছাড় দেব না।
সমাবেশে সমস্যা ও উত্তরণের উপায় বলবেন প্রধানমন্ত্রী: জনসভাস্থল পরিদর্শন শেষে কাদের
গতকাল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থল পরিদর্শন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, শনিবার (আজ) সার্কিট হাউস ময়দানে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সমাবেশে সংকটের কথা বলবেন, সমাধানের কথা বলবেন। সমস্যার কথা বলবেন এবং উত্তরণের উপায় সম্পর্কে বলবেন। করণীয় নিয়ে আগামী দিনের জন্য বার্তা দেবেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ময়মনসিংহে যা উন্নয়ন হয়েছে তার কোনো তুলনা নেই। ময়মনসিংহে যেদিকে যান সেদিকেই উন্নয়ন। এই ময়মনসিংহ এখন আলোকিত ময়মনসিংহ। আমাদের অর্জন সবকিছুই জনগণের চোখের সামনে। ময়মনসিংহবাসীর জন্য নতুন কোনো উন্নয়নের বার্তা আছে কি না–এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, এখন আর কোনো উন্নয়ন নয়। আগামী নির্বাচন হলে তারপর নতুন করে যদি কোনো দাবি থাকে, সেটা দেখা হবে।