প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৩
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা আর কোনো অশান্তি, সংঘাত চাই না। আমরা মানুষের জীবনকে উন্নত করতে চাই। গতকাল রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জুলিও কুরি শান্তি পদকপ্রাপ্তির সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্বশান্তি পরিষদ জুলিও কুরি শান্তি পুরস্কার পান। ফিদেল কাস্ত্রো, হো চি মিন, ইয়াসির আরাফাত, সালভাদর আলেন্দে, নেলসন ম্যান্ডেলা, ইন্দিরা গান্ধী, মাদার তেরেসা, পাবলো নেরুদা, জওহরলাল নেহরু, মার্টিন লুথার কিং এবং লিওনিদ ব্রেজনেভের মতো বিশ্ব নেতারা এ পুরস্কারে ভূষিত হন। এটি ছিল বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতার অবদানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। বাংলাদেশের জন্যও প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক পুরস্কার।
বর্তমান সরকার ২০০৮ সালের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর পরিকল্পিতভাবে দেশের মানুষের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠন থেকে অব্যাহত শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশের কারণে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সক্ষম হয়েছে। ফলে, আমরা দারিদ্র্যের হার এবং মাতৃমৃত্যু হ্রাস করতে, শিক্ষার হার এবং মানুষের গড় আয়ু বাড়াতে পেরেছি।
দেশে বিরাজমান টেকসই ও শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশই বাংলাদেশের অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির একমাত্র কারণ দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি শান্তিপূর্ণ টেকসই পরিবেশ জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে সহায়ক এবং সবাইকে এটি মনে রাখতে হবে।
আলোচনার মাধ্যমে সব বিরোধ নিষ্পত্তি সম্ভব। বাংলাদেশ যে কাজটি ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন কেন এই অস্ত্র প্রতিযোগিতা, অস্ত্র প্রতিযোগিতার জন্য যে অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে তা ক্ষুধার্ত শিশু ও মানুষের জন্য ব্যবহার করা হবে না কেন? এই অস্ত্র প্রতিযোগিতার জন্য হাজার হাজার শিশু ও নারী বিশ্বজুড়ে অমানবিক জীবনযাপন করছে।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ১০ লাখের বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে, যারা নিপীড়নের মুখোমুখি হয়েছিল, যা তাকে ১৯৭১ সালের পরিস্থিতি স্মরণ করিয়ে দেয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই পৃথিবীতে শান্তি ফিরে আসুক, কোনো ধরনের অশান্তি থাকবে না। যারা দেশের স্বাধীনতা চায়নি তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছে। প্রতি মুহূর্তে আমাদের তাদের (স্বাধীনতা বিরোধীদের) বাধা অতিক্রম করতে হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন, সারাজীবন শান্তির বাণী প্রচার করেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কী দুর্ভাগ্য, যে মানুষটি সারাজীবন শান্তির কথা বলেছেন তাকেই জীবন দিতে হয়েছিল। তিনি আর আমাদের মধ্যে নেই, তবে আমরা চাই তার দেশ উন্নত ও সমৃদ্ধ হিসেবে গড়ে উঠুক।
দেশে-বিদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যারা কাজ করছেন তাদের স্বীকৃতি দিতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শান্তি পুরস্কার’ প্রবর্তনের ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শান্তি চাই এবং আমরা অবশ্যই শান্তির পথে এগিয়ে যাব।
শুরুতেই বঙ্গবন্ধু ও তার জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তির ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রদানের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট ও প্রথম দিনের কভার ও স্মারক গ্রন্থের প্রচ্ছদও উন্মোচন করেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন এবং মূল বক্তব্য দেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও গবেষক মোনায়েম সরকার। মূল বক্তব্যের ওপর আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও বিশিষ্ট লেখক আনোয়ারা সৈয়দ হক। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের সভাপতি মোজাফফর হোসেন পল্টু।