৫ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার,সন্ধ্যা ৭:১১

আ’লীগের সব পদ থেকে অব্যাহতি, পঙ্কজ বিরোধীদের মিষ্টি বিতরণ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২

  • শেয়ার করুন

পল্লীর আভাস: বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যসহ দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া এমপি পঙ্কজ দেবনাথের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ নানা অভিযোগ এনেছেন নেতাকর্মীরা। বরিশাল-৪ আসনের এ সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষরা নেতাকর্মীদের হত্যা, পঙ্গু করে দেওয়া, মামলা দিয়ে হয়রানিসহ দলের মধ্যে বিভেদ ও গ্রুপিং সৃষ্টির অভিযোগ এনেছেন।

পঙ্কজ দেবনাথ পদ হারানোয় আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করছেন তার বিরোধীরা। তবে, তার অনুসারী নেতাকর্মীরা বিষয়টি ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছেন।

হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ টিপু বলেন, ‘পঙ্কজ দেবনাথ দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন। নিজের আধিপত্য ধরে রাখতে অনুসারীদের দিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর দমন-নিপীড়ন চালিয়েছেন। এ কারণে হামলা-পাল্টা হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।’

টিপু অভিযোগ করে বলেন, ‘হিজলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ তিনটি ইউনিয়নে দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের হারিয়ে নিজের অনুসারীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জিতিয়ে নিয়েছেন। তাকে (পঙ্কজ) অব্যাহতি দেওয়ায় হিজলা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি বিতরণ করাসহ আনন্দ মিছিল করেছেন নির্যাতিত নেতাকর্মীরা।’

আওয়ামী লীগের এ নেতা জানান, গত রোববার সন্ধ্যায় হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি আনন্দ মিছিল বের করেন নেতাকর্মীরা। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় তারা পথচারীদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনায়েত হোসেন হাওলাদারের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এতে অংশ নেন। এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলতাফ মাহমুদের নেতৃত্বে কাউরিয়া বাজার ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল লতিফ খানের নেতৃত্বে হরিনাথপুর বাজারে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে।

মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র কামালউদ্দিন খান বলেন, ‘এমন কোনো হীন অপকর্ম নেই, যা এমপি পঙ্কজ দেবনাথের নির্দেশে তার অনুসারীরা করেনি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ নয়টি ইউনিয়নের দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের হারানো হয়েছে। তার অনুসারীদের নিয়ে সব বাজার, খেয়াঘাট ও চর দখল করিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলার কোনো নিয়মনীতি মানেনি তিনি।’

তার ওপর শুধু নেতাকর্মীরাই নয়, উপজেলা প্রশাসন ক্ষুব্ধ ছিলেন জানিয়ে পৌর মেয়র বলেন, ‘তারা এসব অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দলীয় প্রধান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিকে জানিয়েছেন। প্রশাসন তাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তাদের মতো করে জানিয়েছেন।’

এমপি পঙ্কজ তাকে কোপানোর নির্দেশ দিয়েছেন, এমন একটি অডিও ভাইরাল হয়েছে জানিয়ে কামালউদ্দিন খান বলেন, ‘পঙ্কজ দেবনাথের কারণে দলের বিভেদ সৃষ্টি হওয়ায় এখন পর্যন্ত ১০ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। শতাধিক নেতাকর্মী পঙ্গু হয়েছেন। আওয়ামী লীগের মূলধারার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা করিয়েছেন।’

এ পৌর মেয়র বলেন, পঙ্কজ দেবনাথের অব্যাহতির খবর প্রকাশের পর থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা নানাভাবে আনন্দ প্রকাশ করছেন। তবে তিনি তাদের এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন। অনেকে আনন্দ মিছিল করতে চেয়েছিলেন, তা করতে বারণ করা হয়।

বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুনসুর আহমেদ বলেন, ‘এমপি পঙ্কজ দেবনাথের নির্দেশে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী হত্যার শিকার হয়েছেন। পঙ্গু হয়েছেন অসংখ্য নেতাকর্মী। তিনি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড় করিয়ে তাদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। পঙ্কজ অনেক আগেই আওয়ামী লীগে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।’

বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, ‘কার্যনির্বাহী সংসদ সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে তাকে (পঙ্কজ) জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য পদ এবং আওয়ামী লীগের সব পদ থেকে অব্যহতি প্রদান করেছে কেন্দ্র। এই সংক্রান্ত নির্দেশনা আমরা পেয়েছি।’

তিনি বলেন, গত চার বছরে মেহেন্দিগঞ্জে দলকে বিভক্ত করে নিজের বলয় সৃষ্টি করে পঙ্কজ দেবনাথ নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে দলীয় নেতাকর্মীদের হত্যা, নির্যাতন, পঙ্গু করে দেওয়া, মিথ্যা মামলায় হয়রানি এবং স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপতৎপরতা চালিয়েছেন। বিভিন্ন নির্বাচনে তিনি নৌকার প্রার্থীদের বিপক্ষে কাজ করেছেন।’

পংকজ দেবনাথের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম ভুলু বলেন, ‘পঙ্কজ দেবনাথ দলীয় এমপি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার সঙ্গে এক হয়ে এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামী লীগ থেকে কখনো আমাকে বলা হয়নি পঙ্কজের সঙ্গে থাকা যাবে না।’

ভুলু আরও বলেন, ‘একটি বড় দলে গ্রুপিং থাকবে। এখানে গ্রুপিং রয়েছে। কেউ তো বলতে পারবে না এমপি বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়েছেন।’

পঙ্কজ দেবনাথের বিরুদ্ধে হত্যা, পঙ্গু করে দেওয়ার অভিযোগ ষড়যন্ত্র দাবি করে খোরশেদ আলম ভুলু বলেন, ‘দুই দল মারামারি করেছে। সেখানে যদি কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তার দায় তো পঙ্কজ দেবনাথ নেবেন না।’

  • শেয়ার করুন