প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২২
গরম হাওয়া বইছে সিলেটের রাজনীতিতে। চাঙ্গা হয়ে উঠেছে দলগুলো। বিএনপি ব্যস্ত বিভাগীয় সমাবেশ সফল করা নিয়ে। আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক কার্যক্রম বাড়াতে ডেকেছে বর্ধিত সভা। জাতীয় পার্টিও মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয়। ফলে হঠাৎ চাঙ্গা সিলেটের রাজনীতি। এসব কিছু আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে।
আগামী সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে দল গোছাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, মাঠপর্যায়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও জাতীয় সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। রাজপথ ছাড়তে রাজি নয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। নিয়মিত পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল দুটি। স্থানীয় নেতাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে চলছে পাল্টাপাল্টি আক্রমণ।
সিলেটে রাজনৈতিক এ উত্তাপের সময় নিজেদের মধ্যেও বিদ্রোহ-ক্ষোভ ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। অন্তর্কোন্দলে পিছিয়ে নেই বিএনপিও। আর জাতীয় পার্টির দলীয় কোন্দলে বেকায়দায় নেতারা।
আওয়ামী লীগ : আগামী সংসদ নির্বাচনে জেলার সবক’টি আসনে জয় চায় আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে তৃণমূলে দল আরও সুসংগঠিত করায় মনোযোগী নেতারা। এক মাস ধরে গঠন করা হচ্ছে মহানগর ও জেলার বিভিন্ন ইউনিট কমিটি। এরই মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তাদের অন্তর্দ্বন্দ্ব। মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পকেট কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে মহানগরের একাধিক শীর্ষ নেতাও ক্ষুব্ধ জাকির হোসেনের প্রতি।
তবে গত ২৫ অক্টোবর মহানগর আওয়ামী লীগের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে জাকির হোসেনকে সতর্ক করা হয়েছে। প্রয়োজনে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ায় হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। অন্যদিকে জেলায় কমিটি গঠন নিয়ে দেখা দিয়েছে বিদ্রোহ। গত ২৩ অক্টোবর সদর উপজেলা কমিটি গঠন করেন জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান। কিন্তু একদিন পরই উপজেলা আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ কমিটি প্রত্যাখ্যান করে সংবাদ সম্মেলন করে।
ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের দাবি, নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক পদবিধারী নেতা। এ কমিটি অবিলম্বে বাতিল করা না হলে আন্দোলনে নামবেন তারা। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন। পরবর্তী সময়ে তাদের বরখাস্ত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসছে দলটি। তবে সবকিছু ছাপিয়ে দল গোছানোর মাধ্যমে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই সবাই নৌকার বিজয়ে দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হবেন বলে বিশ্বাস সিলেট আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে জোরেশোরে দল গোছানোর কাজ শুরু করেছি। উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘নেতাকর্মীদের শুধু কেন্দ্রীয় বা দিবসকেন্দ্রিক কর্মসূচি পালনে সীমাবদ্ধ রাখা হচ্ছে না; বরং সরকারের উন্নয়নবার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজে লাগানো হচ্ছে।’
শফিকুর জানান, দুই দফা বন্যায় দলের নেতাকর্মীরা ঘরে বসে থাকেননি, মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তবে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে বিএনপি রাজপথে নৈরাজ্য করলে আওয়ামী লীগ তার মোকাবিলা করবে। দলকে চাঙ্গা করতে আগামী ৬ ও ৭ নভেম্বর জেলা এবং মহানগর আওয়ামী লীগের পৃথক বর্ধিতসভা আহ্বান করা হয়েছে।
বিএনপি : সিলেট বিএনপি এখন আগের চেয়ে অনেকটা উজ্জীবিত। মামলা-হামলার ভয়কে উপেক্ষা করে নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথে দলীয় নানা কর্মসূচি পালন করছে জেলা ও মহানগর বিএনপি। সিলেট থেকেই সরকার পতনের ঘণ্টা বাজানো হবে—এমনটাই দাবি তাদের।