প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০২২
নিষেধাজ্ঞা ও করোনাভাইরাসের কারণে বিদ্যুৎ খরচে কিছুটা সাশ্রয়ী হতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘তার মানে এই নয়, দেশের মানুষ বিদ্যুৎ পাবে না। সবাই বিদ্যুৎ পাচ্ছে এবং পাবে। তবে এক্ষেত্রে সবাইকে একটু মিতব্যয়ী হতে হবে।’ গতকাল বুধবার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) দ্বিতীয় ইউনিটে রি-অ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল বা পরমাণু চুল্লিপাত্র স্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
বৈশ্বিক সংকটের কারণে জ্বালানি খাতে কঠোরতা দেখাতে বাধ্য হওয়া সত্ত্বেও সরকার বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিতব্যয়ী হতে হচ্ছে, কারণ আমদানির ক্ষেত্রে পরিবহন ব্যবস্থায় মূল্যবৃদ্ধি থেকে শুরু করে আকাশছোঁয়া মূল্যস্ফীতি চলছে।’ উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে এবং সাশ্রয়ের দিকে নজর দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। কাজেই বিশ্বব্যাপী চলমান মন্দার অভিঘাত বাংলাদেশেও যে পড়বে, সেটাই স্বাভাবিক। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল সবাইকে বিদ্যুৎ দেওয়া। সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পেরেছি। প্রতিটি ঘরে আলো জ্বেলে সমগ্র বাংলাদেশকে আমরা আলোকিত করেছি।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে রি-অ্যাক্টর ভেসেল স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি চান অ্যালেক্সি লিখাচেভ। প্রধানমন্ত্রী অনুমতি দেওয়ার পর একটি ক্রেনের মাধ্যমে রি-অ্যাক্টরটি নির্দিষ্ট স্থানে বসানো হয়। সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় স্লোগান জয় বাংলা ধ্বনিত হয় সবার কণ্ঠে। এই সময় রি-অ্যাক্টর ভবনে ছিলেন প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর। রি-অ্যাক্টর স্থাপন পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
গত বছরের ১০ অক্টোবর আরএনপিপির প্রথম ইউনিটে আরপিভি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট থেকে ২০২৩ সালে ১২শ মেগাওয়াট এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে একই পরিমাণ বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, রাশিয়ার পরমাণু শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক সংকটের কারণে অনেক উন্নত দেশে খাদ্যের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও এ ধরনের পরিস্থিতি বাংলাদেশে এখনো হয়নি। আমরা জনগণকে খাদ্য নিরাপত্তা দিচ্ছি। ন্যায্যমূল্যে খাবার কেনার জন্য এক কোটি মানুষকে বিশেষ কার্ড দিয়েছি এবং যারা প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে অক্ষম, তাদের বিনামূল্যে খাবার দিচ্ছি।
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ফলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, অনেকেই অনেক কথা বলেছেন; কিন্তু পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তাকেই সরকার প্রাধান্য দিয়েছিল। সরকারের অগ্রাধিকার ছিল দেশবাসীর জীবন-জীবিকা রক্ষার জন্য চেরনোবিলের মতো কোনো পারমাণবিক দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, ‘অনেকেই সমালোচনা করতে পারে, কিন্তু আমাদের এসব সমালোচনায় কর্ণপাত না করলেও চলবে, আমরা দেশ ও জনগণের প্রতি আমাদের দায়িত্বটাই পালন করব।’
শান্তি ও উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ পরমাণু শক্তির ব্যবহারে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র নয়, এটা একটা দৃষ্টান্ত, আমরা এ ধরনের একটা কাজ করতে পারি।