প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩
ভাষাশহীদ শফিউর রহমান, যিনি শফিউর নামেই সমধিক পরিচিত। শফিউর রহমান ১৯১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার শ্রীরামপুর জনপদের কোন্নগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মাহবুবুর রহমান ছিলেন ঢাকার পোস্ট অ্যান্ড টেলিগ্রাফ অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট। তার মায়ের নাম কানেতাতুন নেসা। তিনি কলকাতা গভর্নমেন্ট কমার্শিয়াল কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। তারপর চব্বিশ পরগনার সিভিল সাপ্লাই অফিসে কেরানির চাকুরি গ্রহণ করেন। দেশ ভাগের পর ১৯৪৮ সালে বাবার সঙ্গে ঢাকায় আসেন ও ঢাকা হাইকোর্টে হিসাবরক্ষণ শাখায় কাজে যোগ দেন।
শফিউর রহমানের পাঁচ ভাই ছিল। আসজাদুর রহমান নামে তার এক ভাই সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ডাক্তার ছিলেন। প্রতিদিনের মতো ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি শফিউর রহমান সকাল দশটার দিকে অফিসের উদ্দেশে ঢাকার রঘুনাথ দাস লেনের বাসা থেকে বের হন। সেদিন তিনি পাজামা, শার্ট, গেঞ্জি এবং কোট পরেছিলেন। পায়ে ছিল জুতা। সাইকেলে করেই তিনি অফিসে যাতায়াত করতেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নওয়াবপুর রোডে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আগের দিনের পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ হচ্ছিল। সেই বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ পুনরায় গুলিবর্ষণ করে। পুলিশের গুলি শফিউর রহমানের পিঠে এসে লাগে। ১৯৫৪ সালের শহীদ সংখ্যা সাপ্তাহিক সৈনিকে তার সম্পর্কে প্রকাশিত বিবরণ থেকে জানা যায়, ওইদিন সকাল ১০টায় তিনি সাইকেলে চড়ে নবাবপুর রোড হয়ে অফিসে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি রাইফেলের গুলি তার পৃষ্ঠভেদ করে বের হয়ে যায়। এতে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে ডা. অ্যালিনসন অপারেশন করেন। ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তিনি মারা যান। সে দিনের সেই গুলিতে শহীদ শফিউরের কলিজা ছিঁড়ে গিয়েছিল। অপারেশনের সময় শফিউরের মা, বাবা, স্ত্রী ও মেয়ে শাহনাজ হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন। সেদিন শফিউরের মৃত্যুর পর পুলিশ আত্মীয়দের কাছে লাশ হস্তান্তর করেনি। ১৪ মার্চ ১৯৫২ তারিখের দৈনিক আজাদে প্রকাশিত সরকারি তথ্য বিবরণী অনুসারে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট তার জানাজা পড়ান। জানাজায় তার বাবা ও ভাই উপস্থিত ছিলেন। তারপর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাকে আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। তার কবরের পাশেই রয়েছে আগের দিনের মৃত্যুবরণ করা আবুল বরকতের কবর। শফিউর রহমানের সেই রক্তমাখা শার্ট, কোট, জুতা সংরক্ষণ করা হয়। বর্তমানে এগুলো বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে শহীদ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এমনকি ৫২-র গৌরবদীপ্ত ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদ শফিউর রহমানকে বাংলাদেশ সরকার মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করেন। এ ছাড়া ২০০৬ সালে ভাষা আন্দোলনে মৃত্যুবরণ করা অন্যান্য পরিবারের পাশাপাশি তার স্ত্রী বেগম আকিলা খাতুনকে আজীবন ভাতা প্রদানের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ সরকার।