প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২২
ডিমের পর এবার আমিষের প্রধান উৎস ব্রয়লাসহ সব ধরনের মুরগি বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। বাজারভেদে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকায়। বড় আকারের লাল মুরগি কিনতে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ৩১০-৩৪০ টাকা পর্যন্ত। পাকিস্তানিখ্যাত লেয়ার মুরগি সাইজভেদে ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হয় খুচরা বাজারে। দেশী মুরগির স্বাদ নেয়া রীতিমতো ভাগ্যের ব্যাপার। ছোট সাইজের একটি মুরগি পেতে গুনতে হচ্ছে ৪৫০-৫৫০ টাকা। অর্থাৎ মুরগির দামও ধীরে ধীরে নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে।
এ ছাড়া গরু ও খাসির মাংসের দাম বেশি হওয়ার কারণে ভোক্তারা ব্রয়লার মুরগির ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কিন্তু সেই ব্রয়লার মুরগির দামও বাড়তে শুরু করেছে। মুরগির পাশাপাশি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের দেশী মাছ। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে ভোজ্যতেল ও ময়দার দাম কিছুটা কমলেও বেড়েছে ডিম, আটা, মসুর ডাল, চিনি ও পেঁয়াজের দাম। রসুন ও আদার দাম কমেছে।
চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। শীতের সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম কমেনি। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে বৃষ্টি ও প্রবল বাতাসে সবজিখেত নষ্ট হয়েছে। এ কারণে দাম বাড়ছে সবজির। গড়ে প্রতিকেজি সবজি কিনতে ভোক্তাতে ৬০ টাকা গুনতে হচ্ছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন রাজধানীর কাওরান বাজার, ফার্মগেট কাঁচা বাজার, মোহাম্মপুর টাউন হল মার্কেট, রায়ের বাজার সিটি করপোরেশন মার্কেট এবং মিরপুর-১ সিটি করপোরেশন কাঁচা বাজার মার্কেট থেকে নিত্যপণ্যের দর-দামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বেশিরভাগ বাজার ঘুরে দেখা গেছে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লারসহ সব ধরনের মুরগির দাম।
বাজারভেদে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকায়। গত কয়েক মাস আগেও প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৪০-১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে খুচরা বাজারে। ওই হিসেবে কয়েক মাসের ব্যবধানে প্রতিকেজিতে দাম বেড়েছে প্রায় ৫০ টাকা। গরিবের মাংস হিসেবে খ্যাত ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ায় সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
কারণ খাবারের তালিকায় তাদের ভরসা হয়ে উঠেছিল ব্রয়লার মুরগি ও ফার্মের ডিম। কিন্তু মুরগির দাম বাড়ায় সাধারণের মানুষ এখন আর মাংসের স্বাদ নিতে পারবে কি না সেটা একটি বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিহালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকায়। ঢাকার বেশিরভাগ পরিবারে সকালের নাশতায় থাকে শুধু ডিম-ভাত কিংবা ডিম-রুটি।
অথচ সেই ডিমের দাম এখন নাগালের বাইরে। ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম দ্রুত কমানোর কথা বলছেন ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করছে এমন সংগঠনগুলো। সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবির তথ্যমতে, গত এক বছরে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ১০ এবং ডিমের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত।
রায়ের বাজার সিটি করপোরেশন কাঁচা বাজার থেকে মুরগি কিনছিলেন বাঁশবাড়ির বাসিন্দা ফজল মুনসি। তিনি জানান, ব্রয়লার মুরগিসহ সব ধরনের মুরগি বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া ডিমের দামও বেশি। তিনি জানান, ‘আমাগো মতো স্বল্প আয়ের মানুষ আর মুরগি ও ডিম খাইতে পারব না’।
এ ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে আবার বেড়েছে চিনি, আটা, পেঁয়াজ ও মসুর ডালের দাম। দাম বেড়ে প্রতিকেজি চিনি ১২০-১২৫, পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৫৫-৬০, আটা খোলা প্রতিকেজি ৫৫-৬০ এবং প্যাকেট ৬৫ টাকা, মুসর ডাল ১২০-১৫০, বিক্রি হচ্ছে হচ্ছে খুচরা বাজারে। তবে দাম কমে ভোজ্যতেল সয়াবিন খোলা প্রতিলিটার ১৬০-১৭০, সয়াবিন তেল বোতল পাঁচ লিটার ৮৫০-৮৭০, সয়াবিন বোতল এক লিটার ১৭৫-১৮০, ময়দা খোলা ৬৫-৬৮, ময়দা প্যাকেট ৭২-৭৫ টাকা, আদা ১১০-২০০, রসুন ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে।
এদিকে কাওরান বাজারসহ একাধিক বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগের তুলনায় সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম কমেনি। বাজারে শীতের সবজি যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মুলা, গাজার, লাউ, পালংশাকসহ অন্যান্য সবজি পাওয়া যাচ্ছে। তবে গড়ে ৬০ টাকার নিচে কোন সবজি নেই। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সারা দেশে বৃষ্টিপাত ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সবজিখেত নষ্ট হয়েছে।
এ কারণে শীতের সবজির দাম বাড়ছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, শীতকালীন সবজি হিসেবে পরিচিত বাঁধাকপি ও ফুলকপির দাম অনেক বেশি। বাজারে প্রতিটি ফুলকপি বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়, যার ওজন আধা কেজির বেশি নয়। অন্যদিকে বাঁধাকপি প্রতিটি বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়।