৭ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার,দুপুর ১:৪৯

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি ১৪ মাস

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২২

  • শেয়ার করুন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি ১৪ মাস। কমপক্ষে অর্ধেক আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। নির্দলীয় সরকার ইস্যুর সঙ্গে ইভিএম বিতর্কে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তৈরি হয়েছে তিনটি ধারা।

কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে যাচ্ছে আর কারা যাচ্ছে না, এর বাইরে পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে ১৬টি রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।

দেশের রাজনীতিতে চারটি জোট দৃশ্যমান। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট, বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট, সিপিবির নেতৃত্বে ৬ দলের বাম গণতান্ত্রিক জোট এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরুকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ৭ দলের গণতন্ত্র মঞ্চ। এর বাইরে আছে জাতীয় পার্টি, চরমোনাইর পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, সাবেক রাষ্ট্রপতি বি চৌধুরীর বিকল্পধারা, কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও জাকের পার্টিসহ বেশ কিছু দল।

জোটভুক্ত ও জোটের বাইরে থাকা দলগুলোর মধ্যে মাত্র ৩৯টি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর শুরুতেই নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসে। তবে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট ছাড়াও সংলাপে অংশ নেয়নি আরও কয়েকটি দল।

ধারণা করা হচ্ছে, যেসব দল ইসির সেই সংলাপে অংশ নিয়েছে তাদের সবাই নির্বাচনে যাবে। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্যদের নির্বাচনে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। অবশ্য লাভ-ক্ষতি বিবেচনা করে শেষদিকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কোনো কোনো দল।
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ১৬ দল
নির্বাচনে যাচ্ছে যারা
বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের শরিক ১৩টি দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত। দলগুলো হলো—বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাসদ (ইনু), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (জেপি), তরিকত ফেডারেশন, সাম্যবাদী দল, ন্যাপ (মোজাফফর), বাসদ (রেজাউর রশিদ), গণতন্ত্রী পার্টি, গণআজাদী লীগ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি ও সমাজবাদী দল। এ জোটের দুটি দলের নিবন্ধন নেই।

এরই মধ্যে অবশ্য জাসদ ভেঙে শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাসদ গঠিত হয়েছে। ১৪ দলীয় জোটের কোনো কার্যক্রমে নেই দলটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জোটের সর্বশেষ বৈঠকেও তারা অংশ নেয়নি। নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত। এখনো নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায়নি দলটি।

জোটের বাইরে থাকলেও এর আগে মহাজোটের অংশ ছিল বর্তমানে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বিকল্পধারা, জাকের পার্টি ও বিএনএফ। নানা আলোচনা থাকলেও এ দলগুলো নিশ্চিতভাবেই আগামী নির্বাচনে যাবে।

চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন এখন পর্যন্ত সরকারবিরোধী অবস্থানে থাকলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে সাংগঠনিকভাবে দলকে চাঙ্গা রাখার পাশাপাশি থাকতে পারে নানা হিসাব-নিকাশ। বিএনপি জোট থেকে বের হওয়া বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি (পার্থ) আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। এ ছাড়া জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন এনডিএম শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাবে।

কারা যাচ্ছে না?
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের কোনো দলই এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রাজপথে নেমেছে। জোটে বর্তমানে ১৫টি রাজনৈতিক দল রয়েছে।

দলগুলো হলো—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি, ডেমোক্রেটিক লীগ, পিপলস লীগ, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশ, জাতীয় দল। এর মধ্যে জামায়াতসহ ছয়টি দলের নিবন্ধন নেই।

কর্নেল অলির লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির সঙ্গে বিএনপি জোটের আলোচনা চলছে। বিএনপি নির্বাচনে না গেলে এ দলটিও নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানা গেছে। মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও খেলাফত মজলিস ২০ দলীয় জোট ছাড়লেও আগামী নির্বাচনে তারা না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে যেসব দল
নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় আছে কয়েকটি দল। এসব দল নির্বাচনের আগপর্যন্ত সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে নির্বাচনে যাবে না বাম গণতান্ত্রিক জোট।

এ জোটে আছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন। এর মধ্যে সিপিবি ও বাসদ ছাড়া বাকিদের নিবন্ধন নেই।

রাজনীতির মাঠে সরকারবিরোধী অবস্থান নিয়ে সম্প্রতি সাতটি দল নিয়ে গঠিত নতুন জোট গণতন্ত্র মঞ্চও রয়েছে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে। গণ অধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জেএসডি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এবং গণসংহতি আন্দোলন।

এ জোটের দলগুলোর মধ্যে নিবন্ধন আছে শুধু বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও জেএসডির। এ ছাড়াও নিবন্ধিত তিন দল বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট) ও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।

  • শেয়ার করুন