প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২২
রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা মনে করেন, বিএনপির নাশকতা ও নৈরাজ্যের ইতিহাস রয়েছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে পুরো রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পাহারায় থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বিএনপির সমাবেশের ধারেকাছে না যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড মোকাবিলা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দল ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। সমাবেশের নামে নৈরাজ্য ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড করলে বিএনপিকে কোনো ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ। এসব ঠেকাতে যা যা করা দরকার তাই করবে আওয়ামী লীগ।
১০ ডিসেম্বরে বিএনপির সমাবেশ কোথায় হবে, তা নিশ্চিত নয়। সরকারের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই সমাবেশ করতে অনড় বিএনপি। ফলে সংগত কারণেই বিএনপির এমন অনড় অবস্থানের ব্যাপারে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রশ্ন উঠেছে সমাবেশের আড়ালে বিএনপির অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা, তা নিয়েও। এই জায়গাকেই সমাবেশের সম্ভাব্য স্থান ধরে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ আশপাশের এলাকাসহ পুরো রাজধানীতে কড়া নজরদারি রাখবে। ঢাকার প্রতিটি প্রবেশ পথেই নিজস্ব ব্যবস্থায় পাহারায় থাকবে বিভিন্ন ইউনিট।
অন্যদিকে, বিএনপি নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনেই সমাবেশের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। এটা ক্ষমতাসীন দলের সন্দেহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নয়াপল্টনে সমাবেশের মাধ্যমে নতুন করে কোনো নাশকতার ছক আঁকছে কিনা, সে বিষয়ে খোঁজ-খবর চলছে।
এ বিষয়ে গত বুধবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘বিএনপি কেন তাদের সমাবেশ ১০ ডিসেম্বর বেছে নিয়েছে—এমন প্রশ্ন রেখে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি কোন মতলবে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে চায়, তাদের কি কোনো বদ উদ্দেশ্য আছে? কোন মতলবে তারা এটা চায়?’ তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে আন্দোলনের নামে যদি সহিংসতার উপাদান যুক্ত হয়, তাহলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ সমুচিত জবাব দেবে।’
আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে দলটির বিভিন্ন কর্মসূচির পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগ ৯ ডিসেম্বর প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় বিক্ষোভ মিছিল ও এলাকায় এলাকায় সমাবেশ করবে। ১০ তারিখে রাজধানীর প্রতিটি অলিগলিতে নেতাকর্মীরা সতর্ক পাহারায় থাকবেন।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, ‘বিএনপির অতীত ইতিহাস বিবেচনায় আমরা প্রতিটি এলাকায়, মহল্লায় মহল্লায় সতর্ক অবস্থায় থাকব। আগের দিন জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচারের দাবিতে মিছিল সমাবেশ করব। যেহেতু কয়েক লাখ লোকের সমাবেশের পরিকল্পনা নিয়েছে বিএনপি। তাই জনগণের মনে একটা শঙ্কা রয়েছে, বিএনপি নাশকতা-নৈরাজ্য করবে কিনা! তাই জনগণের নিরাপত্তা দেবে আমাদের নেতাকর্মীরা।’
অন্যদিকে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ৯ ডিসেম্বর থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে অবস্থান নেবে। পরদিন সমাবেশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সতর্কাবস্থায় থাকবে। এই উপলক্ষে শুক্রবার বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেট সংলগ্ন স্টেডিয়াম অংশে বৃহৎ সমাবেশ করবে। তা ছাড়া প্রতিটি এলাকার নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এক জায়গায় এত মানুষের সমাবেশ করবে বিএনপি, আর আমরা আওয়ামী লীগ সতর্ক থাকব—এটাই স্বাভাবিক। সব নেতাকর্মীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ৯ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে বর্ধিত সভায় বিস্তারিত পরিকল্পনা নেতাকর্মীদের জানিয়ে দেওয়া হবে।’
এ ছাড়া ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকার সব প্রবেশ পথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হবে। আগের দিন বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ করবে। তবে এখনো কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়নি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সঙ্গে সহযোগী সংগঠনগুলোও ১০ ডিসেম্বর ঘিরে নানা প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগও বিভিন্ন কর্মসূচির পরিকল্পনা করছে। এ উপলক্ষে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন শাখা-ইউনিটের সঙ্গে সমন্বয় করে ঢাকার প্রতিটি জায়গায় সতর্কাবস্থায় থাকবে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক একেএম আফজালুর রহমান বাবু বলেন, ‘বিএনপি জনজীবনের ব্যাঘাত, জানমালের ক্ষতিসহ আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ তা ঠেকাতে প্রস্তুত। আওয়ামী লীগের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকবে স্বেচ্ছাসেবক লীগ।’
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ১০ ডিসেম্বর ঘিরে বিএনপিরও পরিকল্পনা রয়েছে। শুধু বিএনপি একা নয়, বিএনপির সঙ্গে তাদের জোট শরিক জামায়াত সম্পৃক্ততার বিষয়ে ইঙ্গিত মিলেছে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নয়াপল্টনে দলের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের পর আশপাশের পুরো এলাকা দখল করার পরিকল্পনা করতে পারে—এমন আশঙ্কা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সতর্কাবস্থায় ও নিজ নিজ এলাকায় পাহারায় থাকবেন। কারণ, জনগণ জানে বিএনপি অতীতে কী করেছে। তারা ভয়াবহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে পারে, লুটপাট এবং জনগণ ও রাষ্টের সম্পত্তি ধ্বংস করতে পারে, মানুষকে পুড়িয়ে মারতে পারে।’ বিএনপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপিকে নিবৃত করতে যা যা করা দরকার তাই করবে আওয়ামী লীগ। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’