প্রকাশিত: জুলাই ২৫, ২০২৫
রােহান হোসেন : বর্তমান বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন একটি ভয়াবহ বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক দশকে মানুষের অব্যাহত শিল্পায়ন, যানবাহন, বন উজাড় এবং জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার জলবায়ুর ভারসাম্যকে ব্যাহত করেছে। এর ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে গ্লোবাল ওয়ার্মিং, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার মতো নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা ও তীব্রতা বেড়ে চলেছে। এই সংকট শুধু পরিবেশকেই নয়, মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকেই প্রভাবিত করছে।
বিশ্বের উন্নত দেশ থেকে শুরু করে উন্নয়নশীল দেশ পর্যন্ত সকলের ওপর এই পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মালাইশিয়া, ফিলিপাইন, এবং অন্য অনেক উপকূলীয় দেশ গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের বৃদ্ধির কারণে বন্দর নগরী ডুবে যাওয়া, কৃষি জমির ক্ষতি, পানির স্বচ্ছতা কমে যাওয়া এসব ইতোমধ্যে প্রকট হয়ে উঠেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ হচ্ছে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ। কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি গ্যাসগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আটকা পড়ে তাপ ধরে রাখে, যা গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর কারণ হয়। গত কয়েক দশকে এই গ্যাসের মাত্রা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই সংকট মোকাবিলায় ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে, যার লক্ষ্য হলো বিশ্ব তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা এবং সম্ভব হলে ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা। এর মাধ্যমে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর পাশাপাশি নবায়নযোগ্য শক্তি, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।
তবে শুধু সরকার নয়, ব্যক্তিরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো, পুনঃব্যবহারযোগ্য সামগ্রী ব্যবহার, গাছ লাগানো, যানবাহনে কম জ্বালানি ব্যবহার করা, এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সচেতনতা বৃদ্ধি করে আমরা সবাই এই সংকট মোকাবিলায় অবদান রাখতে পারি।
বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর অনেক সম্মেলন ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেমন COP শৃঙ্খলাবদ্ধ জলবায়ু সম্মেলন, যেখানে দেশগুলো তাদের কমিটমেন্ট পুনর্বিবেচনা করে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। আমাদের দেশ বাংলাদেশও এগুলোতে অংশ নিয়ে জলবায়ু প্রতিরোধে সঠিক নীতি নির্ধারণ করছে।
তবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সময় নেই। দ্রুত ও সুদক্ষ পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে। এখনই প্রত্যেকের সচেতনতা, দায়িত্ব ও কর্ম সংহতি প্রয়োজন। বিশ্ব একসঙ্গে কাজ করলে এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব।
বিশ্ব জলবায়ুর প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা একান্তই মানবতার প্রতি দায়িত্ব। পরিবেশের প্রতি যত্নশীলতা এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করাই আমাদের দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষার একমাত্র পথ।