প্রকাশিত: মে ১৩, ২০২৩
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে শক্তিশালী অংশীদারত্ব গড়ে তোলার পাশাপাশি এ অঞ্চলে বিদ্যমান সামুদ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘টেকসই ভবিষ্যতের জন্য শান্তি, অংশীদারত্ব এবং সমৃদ্ধি’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত ষষ্ঠ ‘ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলন-২০২৩’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। সম্মেলনে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা, টেকসই ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য শক্তিশালী অংশীদারত্ব গড়ে তোলা এবং সামুদ্রিক নিরাপত্তা জোরদারসহ ছয় প্রস্তাব পেশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমত, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোকে তাদের উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘সমুদ্র কূটনীতি’ জোরালো করতে হবে। দ্বিতীয়ত, এ অঞ্চলের অনেক দেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবের ঝুঁকিতে থাকার বিষয়টি বিবেচনা করে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং তদসংশ্লিষ্ট ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আমাদের সহযোগিতা বাড়াতে হবে। তৃতীয়ত, একটি স্থিতিশীল এবং টেকসই ভবিষ্যতের জন্য ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সমীহের ভিত্তিতে শক্তিশালী অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে হবে। চতুর্থ প্রস্তাবে বলেন, ভারত মহাসাগরে সামুদ্রিক নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিদ্যমান ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, যার মধ্যে সমুদ্রে জরুরি পরিস্থিতিতে সাড়া দেওয়া, অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজে সহায়তা এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে নৌ ও বিমান চলাচল নিশ্চিত করা হবে। পঞ্চমত, ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চর্চা এবং জনবান্ধব উন্নয়নের প্রসার করতে হবে। একটি শান্তিপূর্ণ, সমতাভিত্তিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের উদ্দেশ্যে বিশ্ব জনগোষ্ঠীর অর্ধেক নারী সম্প্রদায়কে যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। ষষ্ঠত, উন্মুক্ত, স্বচ্ছ, নিয়মভিত্তিক বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার প্রসার করা, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে এই অঞ্চলে এবং তার বাইরেও সমতাভিত্তিক টেকসই উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে।
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শান্তি এবং সমৃদ্ধি নিশ্চিতে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে অংশীদারত্ব এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি করা আবশ্যক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বৈশ্বিক জনসংখ্যার ৬৪ শতাংশ এ অঞ্চলে বাস করে এবং জিডিপিতে এ অঞ্চলের অবদান ৬০ শতাংশ। ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এ অঞ্চলটি নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার জন্য সর্বদা সামুদ্রিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। একজন দূরদর্শী নেতা হিসেবে ১৯৭৪ সালে তিনি বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ এবং এ সীমার মধ্যে সামুদ্রিক সম্পদ অনুসন্ধানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ‘টেরিটরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোন অ্যাক্ট ১৯৭৪’ প্রণয়ন করেন। আইনটি ‘সমুদ্র আইন সম্পর্কিত জাতিসংঘ কনভেনশন, ১৯৮২’ ঘোষণার আট বছর আগে কার্যকর করা হয়েছিল, যখন বিশ্ব সম্প্রদায়ের এ বিষয়ে সীমিত ধারণা ছিল।
ভারত মহাসাগরকে গুরুত্ব দিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশের ‘ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল’ তৈরির কথাও উল্লেখ করেন তিনি। সমুদ্রপথের ব্যাপক সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে, সাগর-মহাসাগরগুলোর মাধ্যমে বিশ্ব বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ ও তেল পরিবহনের ৬০ শতাংশ পরিচালিত হচ্ছে। সমুদ্রপথে প্রকৃত বাণিজ্য গত ১৫ বছরে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, খাদ্য, জ্বালানি এবং সার সংকটের ফলে বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে পড়েছে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলকেও জলবায়ু পরিবর্তন, সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার জন্য এ অঞ্চলের দেশগুলোকে অংশীদারত্ব এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর জোর দিতে হবে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় সম্মেলনের ষষ্ঠ সংস্করণ আয়োজনে সহযোগিতা করার জন্য ভারত সরকার এবং ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন মরিশাসের প্রেসিডেন্ট পৃথ্বীরাজ সিং রূপন, মালদ্বীপের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল নাসিম, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট রাম মাধব প্রমুখ।