১৫ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার,রাত ১০:৪১

যে হাতে আগুন দেবে সেই হাত পুড়িয়ে দেওয়া হবে- প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২৩

  • শেয়ার করুন

আগুনসন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত আগুন দিয়ে আবারও মানুষ পোড়াতে চাইলে তাদের হাত আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হবে। সেজন্য নেতাকর্মীদেরও প্রস্তুত থাকতে হবে। কেউ দেশের ক্ষতি করতে চাইলে জনগণই তার উপযুক্ত জবাব দেবে। গতকাল শনিবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলটির নবনির্বাচিত জাতীয় কমিটি, কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভায় সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা নির্বাচন চায় না। ভিন্ন পথে ক্ষমতায় আসতে চায়। বিএনপি-জামায়াত মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। জিয়াউর রহমান গুম-খুনের রাজনীতি শুরু করেছিল। সে ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে তার স্ত্রী এবং ছেলে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই বিএনপি-জামায়াত ২০১৩ থেকে ১৫ সাল পর্যন্ত অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল। তাদের ঘৃণা জানাতে হবে। তারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। হত্যা, খুন ও গুম জিয়াউর রহমান শুরু করেছিল। খালেদা জিয়া ও তার কুলাঙ্গার পুত্র মিলে ২১ আগস্ট থেকে শুরু করে অসংখ্য মানুষ হত্যা করেছে এবং অত্যাচার নির্যাতন করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, আগামীতে যদি একটা মানুষকেও তারা ক্ষতিগ্রস্ত করে তাহলে যে হাত দিয়ে আগুন দেবে ওই আগুনে সেই হাত পুড়িয়ে দেওয়া হবে। যে হাতে মানুষ খুন করবে তাদের উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া হবে। এই কথাটা যেন সবার মনে থাকে। তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) আন্দোলন করতে চায় আমরা বাধা দেব না। কিন্তু আন্দোলনের নামে যদি আবারও কোন রকমের নাশকতা করে তাহলে জনগণ তাদের ছাড়বে না। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। উন্নয়নশীল দেশের ক্ষতি সাধন করতে চায়, আর্থ-সামাজিক ক্ষতি সাধন করতে চায় তাহলে তাদের উপযুক্ত জবাব বাংলাদেশের জনগণ দেবে।

শেখ হাসিনা বলেন, এই দেশটাকে নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। আমরা কাউকে দেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে দেশ চলবে। এই মাটিতে (টুঙ্গিপাড়া) বসে এই প্রতিজ্ঞা নিচ্ছি, বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি কেউ যাতে গতিরোধ করতে না পারে, তার জন্য আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যন্ত প্রতিটি নেতা কর্মী সজাগ থাকবে, দৃঢ থাকবে। যে কোন অপকর্মের প্রতিরোধ করবে।এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব।

যৌথ সভায় আরও ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মুহাম্মদ ফারুক খান, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুবউল-আলম হানিফ, দীপু মনি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, ক্রীড়া সম্পাদক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খানসহ নবনির্বাচিত জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা।

সভার কার্যক্রম শুরুর আগে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়। যৌথ সভা শুরুর আগে গোপালগঞ্জের ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্প এবং একটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সভার মাধ্যমে টুঙ্গিপাড়া থেকে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে নবনির্বাচিত কমিটির নতুন পথচলা শুরু হলো। এর আগে দুপুর ১২টায় নবগঠিত কমিটি নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান তার কন্যা শেখ হাসিনা। তার আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শ্রদ্ধা জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই জনগণের পাশে আছে। কারণ, এটি আওয়ামী লীগের নীতি। দেশবাসীকে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে যা যা প্রয়োজন আওয়ামী লীগ সরকার সবই করে যাচ্ছে। শুধু সরকার নয়, দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করবে আওয়ামী লীগ। স্মার্ট বাংলাদেশ ও স্মার্ট জনশক্তি গড়ে তোলাই এখন আওয়ামী লীগের লক্ষ্য।

আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, করোনাভাইরাস ও যে কোনো দুর্যোগে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের জনগণের পাশে দাঁড়ানো থেকে প্রমাণিত হয় এ দল সর্বদা জনগণের প্রতিটি দুঃখ-কষ্টে পাশে থাকে। এ সময় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিনি প্রতিটি অনাবাদি জমিতে শস্য ফলানোর আহ্বান জানান। করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কার মধ্যেও দেশের অর্থনীতি সচল আছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের যে মর্যাদা পেয়েছে তা ধরে রেখে এগিয়ে যাওয়াই তার সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে কী কী করণীয় সে বিষয়েও তার সরকার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। গত তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনা করতে এসে প্রতি নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে মানুষের সেবা করার সুযোগ পেয়েছে। আর সেজন্য আজ বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে আরও ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়েছে। আজ উন্নত দেশও হিমশিম খাচ্ছে এবং নিজেদের তারা অর্থনৈতিক মন্দার দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশ এখনো সে পর্যায়ে যায়নি এবং সরকার এখনো বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি, সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচির কলেবর বৃদ্ধি করে দিয়েছে। অতি উচ্চমূল্যে বিদেশ থেকে ক্রয় করতে হলেও ভর্তুকি প্রদান করে নিত্যপণ্য মানুষের মধ্যে সরবরাহ করছে। সরকারের পক্ষ থেকে যা করণীয় সেটি আওয়ামী লীগ যতদিন সরকারে আছে—মানুষের কষ্ট দূর করার জন্য যা যা করণীয় তা করে যাবে। সেটি আমরা করে যাচ্ছি।

সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষকে স্বাধীনতা যেমন এনে দিয়েছে তেমনই আর্থসামাজিক উন্নতিও এনে দিয়েছে। মাত্র ১৪ বছরে বাংলাদেশ আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বে একটি মর্যাদা পেয়েছে।

এদিকে যৌথসভায় ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ৭ মার্চই ঐতিহাসিক ভাষণ,১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের দলীয় কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়।

এর আগে সকালে দলের নেতৃবৃন্দ নিয়ে জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ফাতেহা পাঠ করেন এবং জাতির পিতা ও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার অন্যান্য শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

গত শুক্রবার আওয়ামী লীগ সভাপতি টুঙ্গিপাড়ায় এসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর সড়কপথে খুলনায় গিয়ে মায়ের নামে কেনা সম্পত্তি ঘুরে দেখেন তিনি। খুলনা থেকে আবার সড়কপথে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ফিরে নিজ বাসভবনে রাত্রি যাপন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। যৌথসভা শেষে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সড়ক পথে ঢাকায় ফেরেন।

টুঙ্গিপাড়ায় পৈতৃক জমি পরিদর্শন করলেন শেখ হাসিনা : গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় পৈতৃক জমি পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল দুই দিনের ব্যক্তিগত সফরের শেষ দিনে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী ইউনিয়নের পূবের বিলে নিজেদের এসব জমি পরিদর্শনে যান তিনি।

এ সময় জমিগুলোকে চাষ উপযোগী করে তোলার ব্যাপারে নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। জলাভূমির অন্তর্গত এ অঞ্চলের জমিগুলো বছরের ৮-৯ মাসই পানির নিচে থাকে। এসব জমিতে ভাসমান বেডে সবজি ও অন্যান্য ফসল চাষ করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী সারা দেশের সব অনাবাদি পতিত জমিতে চাষাবাদ করার জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কোথাও এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি না থাকে।

  • শেয়ার করুন