৫ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার,রাত ১:৫৪

রোহিঙ্গাদের নেবে যুক্তরাষ্ট্র, সঙ্কটের যৌক্তিক সমাধান জরুরি

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২২

  • শেয়ার করুন

মিয়ানমারে নির্যাতিত রোহিঙ্গা শরণার্থীর ‘বড় সংখ্যক’কে আশ্রয় দেওয়ার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো গণহত্যার পাঁচ বছরপূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এ কথা জানান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এ তথ্য জানিয়েছে। অন্যদিকে জাপানও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি।

অ্যান্টনি ব্লিংকেন জানিয়েছেন, ২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গাদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা নিজ ভূমিতে নিরাপদে ফেরত যেতে পারবে না। রাখাইনের সহিংসতা থেকে জীবন নিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে ১৭০ কোটি ডলার মানবিক সহযোগিতা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিস্তৃত মানবিক সাড়াদানের জরুরি অংশ হিসেবে তারা বাংলাদেশে থাকা এবং অন্য স্থানে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসন উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বাড়াতে কাজ করেছে।

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে দুই দৃষ্টিভঙ্গিতে অবস্থান করছে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘের মতে, রোহিঙ্গা সঙ্কটের শুরু মিয়ানমারে। এর সমাধানও মিয়ানমারকে করতে হবে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত নোলিন হাইজার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এ অঞ্চলের দেশগুলোর নেতৃত্বের কাছে তিনি আহ্বান জানিয়ে যাবেন। সেই সঙ্গে শরণার্থীদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং সম্মানের সঙ্গে নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার জন্য মিয়ানমার যাতে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে, তার চাপ সৃষ্টি করতেও দেশগুলোর কাছে আহ্বান জানাবেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ফেরত যাওয়ার সুযোগ নেই। এ জন্য তারা রোহিঙ্গাদের যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসন নিয়ে কাজ করছে।

কূটনীতিকদের মতে, রোহিঙ্গাদের তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের কথা বাংলাদেশ একাধিকবার বলেছে। তবে যে দেশ নিতে চায়, সেই সংখ্যাটি আসলে কত হবে তা বিবেচনার বিষয়। বর্তমানে বাংলাদেশে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে যদি ২ লাখ রোহিঙ্গা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিয়ে যায়, তবে আরও ১০ লাখের বোঝা বাংলাদেশের ওপরেই থেকে যাবে। পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো ও তাদের বন্ধুরা যদি সব রোহিঙ্গা নিয়ে যায়, তাতে সবচেয়ে বেশি খুশি হবে মিয়ানমার। এরপর লাভ হবে বাংলাদেশের। শুধু রোহিঙ্গা নিয়েই বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সম্পর্কে টানাপড়েন রয়েছে। এ সঙ্কটের সমাধান হলে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে আর কোনো বাধা থাকবে না।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান যদি কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা নেয় তাহলে মিয়ানমার সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে ধীরে চলার নীতি নিতে পারে। মিয়ানমার অপেক্ষা করবে আর কোন দেশ কত রোহিঙ্গা পুনর্বাসন করে। যে হারে রোহিঙ্গা জনসংখ্যা বাংলাদেশে বাড়ছে, আগামী ১০ বছরে রোহিঙ্গার সংখ্যা ২০ লাখের কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছাবে। ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে। মিয়ানমারে সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে ব্যর্থ হয়ে অনেকে নানা ধরনের উদ্যোগের প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রসহ যেকোনো দেশের পুনর্বাসনের প্রস্তাবকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

আমরা লক্ষ্য করছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক দিন ধরেই আন্তর্জাতিক মহলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের কথা বলে আসছেন। তিনি ২০১৭ সাল থেকে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য প্লাটফর্মে রোহিঙ্গা সঙ্কটের গুরুত্ব বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের উচ্চপর্যায়ের এক আলোচনায় শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতএব, এ ব্যাপারে জরুরি প্রস্তাব গ্রহণ করা প্রয়োজন।’ আমরা মনে করি এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে এসেছে। আরও দেশ যদি একইভাবে এগিয়ে আসে তা আমাদের জন্য ভালো। আমরা যৌক্তিক উপায়ে রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান চাই। আমাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশ, বিশেষ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সার্বিক বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

  • শেয়ার করুন