১৪ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার,বিকাল ৩:২৬

শুরু হলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২২

  • শেয়ার করুন

শুরু হলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে যুদ্ধরত সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে একক রণকৌশলে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য সমগ্র দেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল। প্রাথমিক প্রতিরোধে অনেক বিপর্যয় ও আত্মদানের পরে একাত্তরের মধ্যভাগেই রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনী প্রাধান্য অর্জন করতে থাকে। মুক্তিবাহিনী ১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার দর্শনা ও সিলেটের শমশেরনগর আক্রমণ করে। এদিন খুলনার ভোমরা ও খালিশপুর, যশোরের বেনাপোল, আফ্রা, সিমুলিয়া, উস্তালি, আন্দাবাডি; ময়মনসিংহের কামালপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা ও সালদা নদী; কুমিল্লার গঙ্গাসাগর, পাথরনগর ও হরিমঙ্গল এবং চট্টগ্রামের হরিণা এলাকায় যুদ্ধ চলে। রণাঙ্গন থেকে আসতে থাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিধ্বস্ত হওয়ার খবর। কাটুলিয়ায় এক তুমুল লড়াইয়ে পাকিস্তানি সেনারা নাজেহাল হয়ে পিছু হটে। এ যুদ্ধে পাঁচ পাকিস্তানি সেনা খতম হয়।

 

বাংলাদেশের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ ঘটনা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বপ্নসাধ পূরণ হয় এ মাসেই। বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় গৌরবদীপ্ত চূড়ান্ত বিজয় আসে এ মাসের ১৬ ডিসেম্বর। স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বে আত্মপরিচয় লাভ করে বাঙালি। অর্জন করে নিজস্ব ভূখণ্ড আর সবুজের বুকে লাল সূর্য খচিত নিজস্ব জাতীয় পতাকা।

 

এ মাসেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি তাদের এ দেশীয় দোসর, রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের সহযোগিতায় হানাদার গোষ্ঠী দেশের মেধাবী, শ্রেষ্ঠ সন্তান-বুদ্ধিজীবী হত্যার নৃশংস হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। সমগ্র জাতিকে মেধাহীন করে দেওয়ার এ ধরনের ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞের দ্বিতীয় কোনো নজির বিশ্বে নেই।

 

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণ আর ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর জল, স্থল আর আকাশপথে সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পরাজয়ের খবর চারদিক থেকে ভেসে আসতে থাকে।

 

১৬ ডিসেম্বর ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। যেখান থেকে ৭ মার্চ স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম,’ বলে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, সেখানেই পরাজয়ের দলিলে স্বাক্ষর করেন পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। আর জাতি অর্জন করে হাজার বছরের স্বপ্নের স্বাধীনতা।

 

বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং তার ডাকে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র জনযুদ্ধে ১৬ ডিসেম্বর জাতির চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।

 

মহান এ বিজয়ের মাস উদযাপনে জাতীয় কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ এবং মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন আজ বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী মুক্তিযোদ্ধা দিবস পালন করবে। এ উপলক্ষে সকাল ৯টায় মিরপুর বীরমুক্তিযোদ্ধা কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ ও প্রয়াত বীরমুক্তিযোদ্ধা জাতীয় বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। এ ছাড়া সকাল ১১টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বীরমুক্তিযোদ্ধা জাতীয় বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

 

আজ সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম ‘মুক্তিযুদ্ধ ৭১ মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ পালন করবে। কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় এবং সব জেলা, মহানগর ও প্রাতিষ্ঠানিক কমিটি সারা দেশে দিবসটি একযোগে পালন করবে। সকাল ৯টায় ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিখা চিরন্তন বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হবে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হবে।

  • শেয়ার করুন