প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২২
শীত মৌসুম শুরু হতে এখনও দুই মাস। কেবলই কার্তিক শুরু হয়ে হেমন্ত ঋতু দুয়ারে প্রবেশ করেছে। এর মধ্যেই প্রকৃতির বৈরী আচরণে শীত ঋতুর বৈশিষ্ট্য দেখা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন জলবায়ুর পরিবর্তনে প্রকৃতির যে বৈশিষ্ট্য তা এলোমেলো হয়ে পড়েছে। ষড় ঋতুর দেশ বাংলাদেশে কোন ঋতুই আর ঠিক থাকছে না। গ্রীষ্মে বৃষ্টি। বর্ষায় খরা। শরতে তাপ। এবার হেমন্তেই বুঝি শীত নামবে।
সেই আলামত এখনই জানান দিচ্ছে সকালে ও বিকেলে আকাশের মেঘভূমির ওপরে নেমে ঘন কুয়াশা ছড়িয়ে দিয়ে। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই শিশির চলে আসে। এই সময়টায় যারা ঘরের বাইরে থাকছেন তাদের পরিবারে কাপড় চোপড় শিশির সিক্ত হচ্ছে।
এমনিতেই উত্তরবঙ্গের মানুষকে শীত মৌসুমে নানা ধরনের ধকল পোহাতে হয়। তার মধ্যে কার্তিক মাসেই শীত নামলে ধকলের মাত্রা বেড়ে যাবে। শনিবার উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড়-দিনাজপুরে খোঁজ খবর করে জানা যায়, কুয়াশা এখনই জেঁকে বসেছে। এই সময়টায় যারা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া গিয়ে ভোরের আলো ফুটতেই প্রকৃতির তীর্থভূমি হিমালয়কন্যা কাঞ্চনজঙ্ঘার অবগুণ্ঠন খুলে দেখেতে গেছেন তারা বিপাকেই পড়েছেন। ঘন কুয়াশা অবগুণ্ঠনে ঢেকে দিয়েছে।
অথচ অক্টোবরের মধ্যভাগে স্নিগ্ধ আলোয় চকচক করে চূড়াটি। বরফ আচ্ছাদিত কাঞ্চনজঙ্ঘা নানা রঙে ছন্দায়িত হয়ে নিসর্গের ভুবন তৈরি করে দেশের উত্তর দুয়ারি তেঁতুলিয়ায়। পর্যটকগণ কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে ঘন কুয়াশার ফেরে পড়েছেন।
মহানন্দার তীরে টিলার ওপর ডাকবাংলো থেকে সবচেয়ে ভালো দেখা যায় পৃথিবীর তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। ভেসে ওঠে ছবির মতো। দার্জিলিংয়ের পাহাড়ি অঞ্চলের ছায়া চোখে পড়ে। সবচেয়ে ভালো দেখতে প্রকৃতির সঙ্গে মিতালি করতে হয়। মেঘ ও কুয়াশাচ্ছন্নমুক্ত গাঢ় নীল আকাশের আবহাওয়ায় অপরূপ অপ্সরা সুন্দরী কাঞ্চনজঙ্ঘা চোখ মেলে। প্রকৃতিপ্রেমীরা আসেন। এবার কুয়াশা সবই আবছা করে রেখেছে।
আবহাওয়া বিভাগের সূত্র জানিয়েছে, এবারের মৌসুমি বায়ুর আচরণ পাল্টেছে। শীত মৌসুমেই শীত নামার কথা। কেন তার ব্যত্যয় ঘটছে তা বোঝা যাচ্ছে না। গত এক সপ্তাহ ধরে বগুড়া অঞ্চলের প্রকৃতিতে দেখা যাচ্ছে ভোরে ঘন কুয়াশায় দৃষ্টিসীমা এক ফুটের মধ্যে থাকছে। কিছুটা পরই তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এই তাপমাত্রা এমন শরীর ঘামে না তাপ অনুভূত হয় বেশি। গা চিটমিট করে। রোদ থেকে ঘরে প্রবেশের পরই ফ্যান চালাতে হয়।
যাদের এয়ারকুলার আছে তারা ২২ মাত্রায় এসি চালান। বিকেলের দিকেই কুয়াশাপাত ও শিশিরপাত শুরু হয় একসঙ্গে। এই অবস্থায় শীত অনুভূত হওয়ার কথা কিন্তু তা হয় না। সন্ধ্যার পর থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত গরম থাকে। মধ্যরাতে শীত অনুভূত হয়। এরমধ্যেই হঠাৎ মেঘের ডাকে বৃষ্টি নেমে আসে। ঠাহর করা যায় না এটা কেমন প্রকৃতি!
একটি সূত্র জানিয়েছে, এবার নভেম্বর ডিসেম্বরজুড়েই এই অবস্থা থাকবে। ডিসেম্বরের মধ্যভাগে শীত নামবে। তবে তার আগেও শীত নামতে পারে। বঙ্গোপসাগরে কয়েকটি নিম্নচাপের সম্ভাবনা আছে। মৌসুমি বায়ু ফিরে যাওয়ার সময় এমন নিম্নচাপ হলে শীত দ্রুতই নামবে। এই অবস্থায় জানুয়ারি মাসজুড়েই থাকবে তীব্র শীত। এই আভাস আবহাওয়া বিভাগের।
মধ্য জানুয়ারিতে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়া শীতের বায়ুর দাপট গিয়ে পড়বে রাজধানী ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে। ওই সময়টায় থাইল্যান্ডের উপকূলে তীব্র বাতাসের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী এলাকার দেশগুলোতে আকাশে মেঘ জমে শীত বাড়িয়ে দেবে। রাতের তাপমাত্রা কমে শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দেবে।
উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বাড়তি অংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে সংলগ্ন বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপের অবস্থান থাকে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে। উত্তরাঞ্চলে জেট বায়ু সক্রিয় হয়ে শীত বাড়ে।
পৌষের মধ্যভাগে দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা অঞ্চল ভেদে ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৪ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বছর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ও মৌলভীবাজারে।
সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে ব্যবধান কম থাকায় অস্বাভাবিক শীত অনুভূত হয়। জানুয়ারি মাসে দেশে দু-তিনটি শৈত্যপ্রবাহের থাবা পড়লে এবং সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রার মধ্যে ব্যবধান কমলে অস্বাভাবিক শীত অনুভূত হতে পারে। তা হলে পরে আরও বিপর্যস্ত হয়ে উঠতে পারে জনজীবন।
বিশ^ দিনে দিনে উষ্ণায়নের দিকে ধাবিত। তারপরও বিশ^জুড়ে জানুয়ারি শীতলতম মাস। আর হিমালয় পাদদেশীয় অঞ্চলের (উত্তরাঞ্চল) মানুষকে শীতের থাবা সইতে হয় মধ্য পৌষ থেকে টেনে মাঘ পার করে ফাল্গুুনের কিছুটা সময় পর্যন্ত।
এই সময়টায় নদী তীরবর্তী এলাকায় ঘনকুয়াশার আস্তরণ দৃষ্টিসীমা কমিয়ে দিয়েছে। এ কারণে সড়ক ও নৌপথে যানবাহন চলতে হচ্ছে ধীরগতিতে। অসুখ বিসুখ প্রায় প্রতিটি ঘরেই লেগেছে। চিকিৎসকগণ বলছেন ভাইরাস ফিভার।
শহরাঞ্চলে শীতের কাপড়ের আগাম বেচাকেনা শুরু হয়েছে। বগুড়ার হকার্স মার্কেটে বেচাকেনা বেশি। এই মার্কেটে পুরাতন গরম কাপড়ের মধ্যে এমন সব কাপড় মেলে যা দেখে কেউ বলবে না এগুলো পুরানো। দামেও কম। শহরের অনেক লোক এখন হকার্স মার্কেটে যাচ্ছে।