৯ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার,সন্ধ্যা ৬:৫৮

এখন পর্যন্ত প্রাথমিক স্তরের একটি বইও ছাপা হয়নি

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২২

  • শেয়ার করুন

রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক সভায় শিক্ষামন্ত্রীকে সামনে রেখে প্রকাশকরা পাঠ্যবই মুদ্রণ নিয়ে সংকটের কথা বলেছেন। যদিও জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি ১ জানুয়ারিই বই চাই। সময়মতো বই দিতে হবে।’

 

এদিকে অনেকেই প্রাথমিক স্তরের বই নিয়ে একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার ষড়যন্ত্রকেও দায়ী করছেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) থেকে এই স্তরের বই ছাপানোর কাগজের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু সেখানকার সংশ্লিষ্ট শাখা রহস্যজনক কারণে কাগজের অনুমোদন আটকে দেয়। আর এ কারণে মুদ্রাকরদের মেশিনও চালু হচ্ছে না। তাদের আরও দাবি, পাঠ্যবই শিশুদের হাতে সময়মতো না গেলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। ডিপিইতে সুযোগ সন্ধানী কর্মকর্তাদের একটি অংশ এই কৌশল নিয়েছে। এ কারণে অন্যান্য বছর এই সময়ে যেখানে প্রাথমিক স্তরের অর্ধেকের মতো বই উপজেলায় পৌঁছে যায়, সেখানে এবার এখন পর্যন্ত একটি বইও ছাপানো হয়নি। আর এই সংকটের জন্য ডিপিইর পাঠ্যবই মুদ্রণ সংক্রান্ত মনিটরিং কমিটির সদস্য মাহফুজা খাতুনকে দায়ী করেছেন। প্রায় এক যুগ পর্যন্ত একই পদে কর্মরত এই কর্মকর্তার কারণে কাগজের অনুমোদন ঝুলে আছে। অন্যান্য বছরও তিনি একইভাবে মুদ্রণ কাজে বিঘ্ন ঘটাতেন বলে মুদ্রাকরদের অভিযোগ। অবশ্য রোববার এ প্রসঙ্গে তার দপ্তরে গেলে তিনি কথা বলতেই রাজি হননি। পাশাপাশি তিনি এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে উপ-পরিচালক ইমামুল হক বলেন, কাগজের ছাড়পত্র কিছুদিন আটকে থাকলেও এখন দেওয়া শুরু হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, শিগগিরই বই ছাপানো শুরু করবেন মুদ্রাকররা।

 

জানা গেছে, এবারে পাঠ্যবই মুদ্রণ সংক্রান্ত জটিলতা সৃষ্টির পেছনে আরও কয়েকটি কারণ আছে। এগুলোর মধ্যে আছে-এনসিটিবি কর্তৃক বিলম্বে মুদ্রণ সংক্রান্ত কাজ শুরু করা; ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির নতুন শিক্ষাক্রমের বই এখনও চূড়ান্ত না হওয়া; করোনা পরিস্থিতি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশে কাগজ উৎপাদন কম হওয়া, ভার্জিন পাল্পের সংকট ও কাগজের আকাশছোঁয়া মূল্য; ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে ছাপাখানার কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া; গত বছর পাঠ্যপুস্তকের কাজ করা মুদ্রাকরদের জামানতের (মোট কাজের ১০ শতাংশ) অর্থ ডিপিইর আটকে রাখা এবং কিছু প্রতিষ্ঠানের কাজ নেওয়ার পরও চুক্তি না করে (কাজ) ফিরিয়ে দেওয়া।

 

নাম প্রকাশ না করে মুদ্রাকররা বলছেন, এনসিটিবি এবারে অনেক দেরি করে পাঠ্যবই মুদ্রণ কাজের প্রক্রিয়া শুরু করে। অন্যান্য বছর এই সময়ে যেখানে অর্ধেকের মতো বই মুদ্রণ শেষ যায়, সেখানে শনিবার বই মুদ্রণের চুক্তি শেষ করেছে মাত্র। আবার ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির নতুন শিক্ষাক্রমের বই দিতে চেয়েছে। কিন্তু তড়িঘড়ি স্কুলে এর পাইলটিং বা পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়। যে কারণে কোনো রকমে পাইলটিং শেষ করে বই লেখা শুরু করে। কিন্তু সেই কাজও এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। এই পরিস্থিতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কাগজের মহাসংকট, বর্ধিত দাম এবং ডিপিইর অসহযোগিতা।

 

অবশ্য বই নিয়ে সম্ভাব্য সংকটের শঙ্কা এখনও উড়িয়ে দিচ্ছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম। তিনি রোববার বলেন, এবার যাকে প্রাথমিকের বইয়ের কাজ দেওয়া হয়েছে, তাকে মাধ্যমিকের কাজ দেওয়া হয়নি। আবার বই সরবরাহে আগে যেখানে ৯৮ দিন সময় দেওয়া হতো, এবারে সর্বনিু ৫০ আর সর্বোচ্চ ৭২ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছরই সংকটের কথা ওঠে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজ উঠে যায়। তিনি আরও বলেন, ‘জামানতের টাকা যাতে ডিপিই ফেরত দেয় সেই লক্ষ্যে আমি আজই (রোববার) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। এছাড়া ডিপিই যাতে কাগজের ছাড়পত্র দেয় সেই বিষয়টিও প্রতিমন্ত্রীকে বলা হয়েছে। তাই মাধ্যমিকের মতো প্রাথমিকের বইও ছাপার কাজ শুরু হয়ে যাবে শিগগিরই।’

  • শেয়ার করুন