৫ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার,সকাল ৯:১২

জাপানি নাগরিক হত্যা: হাইকোর্টে ৫ জঙ্গির আপিল শুনানি শুরু

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২

  • শেয়ার করুন

পল্লীর আভাস: রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিওকে হত্যার দায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) পাঁচ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিল আবেদনের বিষয়ে শুনানি শুরু হয়েছে।

রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি এসএম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ শুনানি শুরু হয়।

আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এ মান্নান ও জাকির হোসেন মাসুদ। আর আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আহসান উল্লাহ।

এ বিষয়ে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এ মান্নান জানান, আপিল শুনানির শুরুর দিন রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আমরা পেপারবুক ও এজাহার এবং চার্জশিট আদালতে উপস্থাপন করেছি।

২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রংপুরের বিশেষ জজ নরেশ চন্দ্র সরকার রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিওকে হত্যার দায়ে জেএমবির পাঁচ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। পাশাপাশি ওই পাঁচজনের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- জেএমবি’র আঞ্চলিক কমান্ডার মাসুদ রানা ওরফে মামুন (২১), সদস্য ইছাহাক আলী (২৫), লিটন মিয়া ওরফে রফিক (২৩), সাখাওয়াত হোসেন (৩২) ও আহসান উল্লাহ আনসারী ওরফে বিপ্লব (২৪)। তাদের মধ্যে আহসান উল্লাহ পলাতক। তিনি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বাকি তিন আসামি মাসুদ রানা, ইছাহাক ও লিটন কারাগারে আছেন।

এরপর মৃত্যুদণ্ডের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদেনের জন্য নথি) হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পাশাপাশি আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন। ওই আপিলের পেপার বুক প্রস্তুত হওয়ার পরে সেটি শুনানির বেঞ্চ নির্ধারণ হলে আপিলের শুনানি শুরু হয়।

এছাড়াও চার্জশিটভুক্ত আট আসামির মধ্যে অন্য দু’জন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাদের মামলার অভিযোগ থেকে বাদ দিয়ে রায় ঘোষণা করা হয়। তাদের মধ্যে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের গজপুরি এলাকার নজরুল ইসলাম ওরফে হাসান ওরফে বাইক হাসান ২০১৬ সালে অভিযোগ গঠনের আগে ১ আগস্ট রাজশাহীতে এবং কুড়িগ্রামের রাজারহাটের চর বিদ্যানন্দ এলাকার সাদ্দাম হোসেন ওরফে রাহুল ওরফে চঞ্চল ওরফে সবুজ ওরফে রবি অভিযোগ গঠনের পর ঢাকার মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। এছাড়া বিজয় নামে আরেকজনের জড়িত থাকার তথ্য পেলেও পুলিশ তাকে শনাক্ত করতে পারেনি।

জেএমবি’র ওই আট জঙ্গির বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ৭ আগস্ট রংপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী।

পরে মামলাটি রংপুরের বিশেষ জজ নরেশ চন্দ্র সরকারের আদালতে স্থানান্তরিত হলে ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।

মামলায় বাদীপক্ষের ৫৫ জন সাক্ষী এবং আসামিপক্ষের একজন সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত।

জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও ২০১১ সালের ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসেন। তিনি রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার কাচু আলুটারি গ্রামে গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে উন্নত মানের ঘাসের চাষ করতেন। ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর ওই কাচু আলুটারি গ্রামে ৬৬ বছর বয়সী কুনিওকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

ওই ঘটনায় রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিওকে হত্যার দায়ে জেএমবির পাঁচ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মামলার রায়ে পাঁচ আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ওই পাঁচজনের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

রংপুরের বিশেষ জজ আদালতের বিচারক নরেশ চন্দ্র সরকার চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় পীরগাছার কালীগঞ্জ বাজারের আবু সাঈদকে (২৮) খালাস দেওয়া হয়েছে। দেশে জঙ্গিদের হাতে কোনো বিদেশি হত্যার ঘটনায় এটাই প্রথম রায়।

রায়ে পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম। জেএমবি ইসলামের নামে নৈরাজ্য, জঙ্গিবাদ ও নৃশংসতা করে থাকে। জঙ্গিদের এসব কর্মকাণ্ডে বিশ্ব ইসলাম সম্পর্কে ভুল বার্তা পায়।

  • শেয়ার করুন