৮ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার,সকাল ৮:৩২

জিন বানিয়েছে মসজিদটি!‘আল্লাহর মসজিদ’

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২৩

  • শেয়ার করুন

প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার কসবা গ্রামের ‘আল্লাহর মসজিদ’। তৎকালীন বাংলার মুসলিম স্থাপত্যের এক ঐতিহাসিক নিদর্শন এ মসজিদ নির্মাণের সময়কাল কিংবা ইতিহাসযুক্ত কোনো শিলালিপি পাওয়া না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে, পঞ্চাদশ শতাব্দীতে হজরত খানজাহান আলীর (রহ.) আমলে মসজিদটি নির্মিত হয়েছে। এটি দেখতে বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদের সঙ্গে অনেকাংশে মিল রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ৩৮ ফুট করে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে নির্মিত মসজিদের দেয়ালগুলো প্রায় ৭ ফুট করে চওড়া। এ ছাড়া পাতলা ইট আর চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত মসজিদের পূর্ব দেয়ালে তিনটি, উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে একটি করে মোট পাঁচটি শিখরাকার সরু উঁচু খিলানযুক্ত প্রবেশপথ রয়েছে। প্রবেশপথের খিলানের ওপরের প্যানেলে কিছু ফুল ও ডায়মন্ড অলংকরণ করা হয়েছে।

বরিশালের গৌরনদীতে অবস্থিত ‘আল্লাহর মসজিদ’।
জিন বানিয়েছে মসজিদটি!
পাশাপাশি ছাদ বরাবর চারদিকে কার্নিশ রয়েছে, যেগুলো মসজিদের চারকোণে থাকা স্তম্ভের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে। ৯ গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদের অভ্যন্তরে চারটি পাথরের স্তম্ভ রয়েছে এবং পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মিহরাব রয়েছে। মাঝখানের মিহরাবটি আকারে বড়। ঐতিহাসিক এ মসজিদ একনজর দেখতে প্রতিনিয়ত দূরদূরান্তের পর্যটকের আগমন ঘটছে। এ ছাড়া মনের আশা পূরণ হওয়ায় মানত নিয়ে আসছেন কেউ কেউ।

আবার অনেক ধর্মপ্রাণ মুসল্লি এ মসজিদে এসে নফল নামাজ আদায় করছেন। মসজিদের চারপাশে হাঁটার জন্য রয়েছে প্রশস্ত রাস্তা। এ ছাড়া মসজিদ কমপ্লেক্সের পূর্বদিকে বিশাল দিঘি। যেখানে নারী-পুরুষদের গোসল ও ওজুর জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া মসজিদে নারীদের নামাজ আদায়ের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা মসজিদের খাদেম মো. বাবুল ফকির জানান, দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে ঐতিহাসিক এ মসজিদের খাদেম হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে শুনে আসছি, প্রায় ৭০০ বছর আগে এ মসজিদ জিন দ্বারা নির্মিত হয়েছে। মসজিদটি নির্মাণের ব্যাপারে বিভিন্ন অলৌকিক কাহিনির কথা বর্ণিত রয়েছে। আর এসব অলৌকিকতার জন্য মসজিদটি ‘আল্লাহর মসজিদ’ নামে পরিচিত।

স্থানীয় বাসিন্দা তারেক মাহমুদ বলেন, বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের পাশে গৌরনদী উপজেলার কসবা গ্রামে অবস্থিত আল্লাহর মসজিদের নকশা, বাইরের ও অভ্যন্তরের গঠনশৈলী এবং ছাদের ওপরের গম্বুজ, প্রবেশপথের অবস্থান ও অলংকরণ দেখে হজরত খানজাহান আলী (রহ.) আমলে নির্মিত বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, মসজিদটিতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক পর্যটক মসজিদটি একনজর দেখার জন্য আসেন।

মসজিদে মানত নিয়ে আসা মাদারীপুর জেলার বাসিন্দা মামুন হোসেন বলেন, আমি প্রবাসে যাওয়ার নিয়ত করেছি। প্রবাসে গিয়ে যাতে ভালোভাবে পৌঁছতে পারি এবং আয়-রোজগার করতে পারি, এ জন্য আমার মা আমাকে এখানে নিয়ে আসার জন্য মানত করেছিলেন। তাই মায়ের সঙ্গে এখানে এসেছি। নফল নামাজ আদায় করেছি। মসজিদটি দেখে মনের মধ্যে একটা প্রশান্তি অনুভব করেছি।

গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস জানান, ইতোমধ্যে মসজিদটি একাধিকবার পরিদর্শন করেছি। প্রাচীন স্থাপত্য এ নিদর্শনটি বর্তমানে প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।

  • শেয়ার করুন