মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকার সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘একটা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটা করা, একজন বয়োবৃদ্ধ মানুষ। খালেদা জিয়া কিন্তু সেটা করেননি। বিমানবাহিনীর প্রধান জামাল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে একটা ঘড়ি চুরির মামলা দিয়ে কোনো ডিভিশন ছাড়া মাত্র দুটি কম্বল দিয়ে তাকে জেলখানায় পাঠিয়েছিলেন। এইভাবে মানুষকে তারা অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে।’

আজ রোববার জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশনে সংসদ উপনেতা প্রয়াত সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এবং সংসদ সদস্য শেখ এ্যানি রহমানের ওপর আনা শোকপ্রস্তাবে আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমানের অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার আমাদের আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মী। শুধু আওয়ামী লীগ কেন, আমাদের বিরোধী দলের যারা আছেন- বিরোধী দলের নেতা যিনি রওশন এরশাদ, জেনারেল এরশাদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু থেকে যারাই আছে, তারা কিন্তু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সাজেদা চৌধুরী বা মতিয়া চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে জিয়াউর রহমান ডিভিশন না দিয়ে ফেলে রেখেছে, ঠিক খালেদা জিয়া একই কাজ করেছিল। রওশন এরশাদ মাস্টার্স ডিগ্রি পাস। প্যানেল কোডে আছে মাস্টার্স ডিগ্রি পাস হলে ডিভিশন দিতে হয়। সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে তাকে ফেলে রেখেছিল। একদম সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে। কিন্তু জাতীয় পার্টি বোধ হয় সেই নির্যাতনের কথা ভুলেই গেছে এখন। ভুলে গেছে অনেকে সেটা। আওয়ামী লীগ তো সবার আগে নির্যাতিত। জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, জেনারেল এরশাদ সবাই নির্যাতন করেছে।

প্রয়াত নেতাদের আদর্শ মাথায় রেখে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ যেহেতু জনগণের সংগঠন, সাজেদা চৌধুরীরর মতো অসংখ্য নিবেদিত নেতাকর্মী এই সংগঠনের হাল ধরেছেন বলেই চরম দুঃসময়ে এই সংগঠন দিক হারায়নি, নীতি আদর্শ নিয়ে এগিয়ে গেছে। আশা করি, আমাদের যারা নেতৃবৃন্দ আছেন তারা প্রয়াত নেতাদের আদর্শটা মাথায় রেখেই এগিয়ে যাবেন, এটাই আমি চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের যে অবদান রেখে গেছেন তা ভুলার নয়। চরম দুর্দিনে দলের হাল ধরা ও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করেছেন। বারবারই আওয়ামী লীগের ওপর আঘাত এসেছে, পাকিস্তানের সময়, মুক্তিযুদ্ধের সময়। সাজেদা চৌধুরী নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করেছেন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ক্যাম্পের নেতৃত্বে ছিলেন যেমন, তেমনই মুক্তিযোদ্ধাদেরও সংগঠিত করেছেন, খোঁজখবর নিয়েছেন।

সাজেদা চৌধুরীর কথা স্মরণ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমি দেশে আসার পর তাকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। সব কাজ তিনি সুচারুরূপে করতেন। আমরা ক্ষমতায় আসার পর তাকে বন ও পরিবেশমন্ত্রী বানিয়েছিলাম। সুন্দরবন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হয়েছে এর অবদান সাজেদা চৌধুরীর। তিনি সুন্দরবনকে সাজিয়েছিলেন। তিনিও পুরস্কার পেয়েছিলেন।

তিনি বলেন, প্রায় দুই দশক ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্ত পরিবেশ ছিল। পঁচাত্তরের পর যে সংঘাত শুরু হয় সেই সংঘাতের হাত থেকে রক্ষার জন্য আমরা ক্ষমতায় এসে শান্তিচুক্তি করি। এক হাজার আটশ অস্ত্রধারী আমার কাছে অস্ত্র সমর্পণ করে। কোথাও এটা দেখা যায় না। আমার প্রত্যেকটি কাজে তিনি সহযোগিতা করতেন। পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে তাকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। সংবিধান সংশোধনেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতি যখন করতাম তখন থেকেই তাকে চিনতাম। তিনি বেশি বয়সে লেখাপড়া করেন। তিনি একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী মুক্তিযোদ্ধা। তাকে হারিয়ে আওয়ামী লীগ একজন নিবেদিত প্রাণ নেতাকে হারাল। তিনি চলে যাওয়াতে শুধু আওয়ামী লীগের নয়, দেশেরও ক্ষতি হয়েছে। বয়স হয়েছে আমাদেরও চলে যেতে হবে। একে একে সবাই ছেড়ে চলে যাচ্ছে। বয়স হয়ে গেছে যেতেই হবে। হয়তো আমিও এক দিন চলে যাব। তবে যে যেটা করেছে আমাদের তো স্মরণ করতেই হবে।