১৪ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার,সকাল ৯:৩০

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ৭ দফা প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার

প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৫

  • শেয়ার করুন

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটের মূল উৎস মিয়ানমারেই এবং এর স্থায়ী সমাধানও সেখানে খুঁজে নিতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ হয় এবং দ্রুত তাদের রাখাইনে প্রত্যাবাসন শুরু হয়’। তিনি সতর্ক করেন, ‘এই সংকটকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংস্কার প্রক্রিয়ার কাছে জিম্মি করে রাখা যাবে না।’

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত “মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি” শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান।

ড. ইউনূস বলেন, ‘গণহত্যা শুরুর আট বছর পরও রোহিঙ্গাদের দুর্দশা অব্যাহত রয়েছে। আন্তর্জাতিক তহবিলের ঘাটতি, কার্যকর পদক্ষেপের অভাব এবং দীর্ঘসূত্রতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। তার মতে, সংকট সমাধানের একমাত্র শান্তিপূর্ণ উপায় হলো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা, যা আন্তর্জাতিক শরণার্থী সহায়তা চালিয়ে যাওয়ার চেয়ে কম ব্যয়বহুল হবে।’

তিনি উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গারা বারবার নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে সম্প্রতি সংঘাত এড়িয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের তাৎক্ষণিকভাবে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা উচিত।

বাংলাদেশের ওপর এ সংকটের প্রভাব তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের বিশাল আর্থিক, সামাজিক ও পরিবেশগত মূল্য বহন করতে হচ্ছে। রাখাইন সীমান্ত দিয়ে মাদকের প্রবাহ ও অপরাধমূলক কার্যকলাপ আমাদের সামাজিক কাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলছে। বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের মতো অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে কর্মসংস্থান দেওয়া সম্ভব নয়।’

বক্তব্যের শেষে তিনি বিশ্বকে আহ্বান জানান, আর অপেক্ষা নয়—এখনই রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পূর্ণ সহযোগিতার অঙ্গীকারও তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ড. ইউনূসের সাত দফা প্রস্তাব

১. রাখাইনে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য বাস্তব রোডম্যাপ তৈরি।
২. মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করে সহিংসতা বন্ধ ও প্রত্যাবাসন শুরু।
৩. রাখাইন স্থিতিশীল করতে আন্তর্জাতিক সমর্থন জোরদার এবং পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক বেসামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত।
৪. রাখাইনের সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোতে রোহিঙ্গাদের একীভূত করতে আস্থা তৈরির পদক্ষেপ গ্রহণ।
৫. যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনার জন্য দাতাদের অর্থায়ন নিশ্চিত।
৬. জবাবদিহিতা ও পুনরুদ্ধারমূলক ন্যায়বিচার অনুসরণ।
৭. মাদক অর্থনীতি ভেঙে ফেলা ও আন্তঃসীমান্ত অপরাধ মোকাবিলা।

  • শেয়ার করুন