প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৩, ২০২২
লোকসান গুনছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার সুবিধা ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে পাওয়া যাচ্ছে না। ডলারপ্রতি ১০ থেকে ১২ টাকার যে অবমূল্যায়ন হয়েছে, এতে বিপিসির ব্যয় অনেক বেড়েছে। এ কারণে এখনো লোকসানে আছে সংস্থাটি। এদিকে, জ্বালানি তেলে ভর্তুকি কমাতে এরই মধ্যে তেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। তারপরও বিপিসি দৈনিক প্রায় ৮ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে, যা মাসে দাঁড়ায় প্রায় ২৪০ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় প্রায় এক বছর পর্যন্ত বিপিসির নিজস্ব তহবিলের টাকায় ভর্তুকি দিয়ে তেল বিক্রি করা হয়। এতে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা টাকা থেকে ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি ভর্তুকি দিতে হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমেছে। তবে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে তেল আমদানিতে খরচ বেশি পড়ছে। ফলে বিপিসি এখনো লোকসানেই আছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন প্রতি লিটার ডিজেলে আমাদের লোকসান ৪-৫ টাকা। এটা গত দেড়-দুই মাস আগেও ছিল ৮-১০ টাকা। এখন বিপিসির দৈনিক লোকসান হচ্ছে প্রায় ৮ কোটি টাকা। তবে ফার্নেস অয়েল, পেট্রোল, অকটেন বিক্রিতে লোকসান নেই। গত আগস্ট মাসে ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর থেকে ডিজেল বিক্রিতে এখনো লোকসান দিতে হচ্ছে।’ বিপিসিকে যদি ব্রেক ইভেন পয়েন্টে রাখতে হয়, তাহলে বিশ্ববাজারে পরিশোধিত ডিজেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১০৪ ডলারে আসতে হয়। এখনো প্রতি ব্যারেল পরিশোধিত ডিজেলের দাম প্রায় ১০৮-১০৯ ডলার বলেও তিনি জানান।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় দেশেও দাম কমানোর দাবি তুলছেন অনেকেই। এ অবস্থায় জ্বালানি তেলের দাম কমানো হলে বিপিসির লোকসান আরও বাড়বে। লোকসানে থাকা বিপিসি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না বলে জানান বিভাগ সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বিপিসিকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দিতে হবে। তা না হলে সামনে জ্বালানি বাজার আবার অস্থির হলে বিপিসির পক্ষে তখন সামাল দেওয়া কঠিন হবে।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা ৭০-৭২ লাখ টন। এর মধ্যে ডিজেলের চাহিদা ৪৮-৪৯ লাখ টন। এখন দৈনিক গড়ে ডিজেল বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১৩ থেকে ১৪ হাজার টন।
এ বিষযে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, ‘যেহেতু বিপিসি ডিজেলে এখনো লোকসান দিচ্ছে, তাই এ মুহূর্তে দাম কমানোর যৌক্তিকতা নেই। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে যে পরিমাণ পরিবহন ভাড়া বেড়েছে, এখন দাম কিছুটা কমানো হলেও পরিবহন ভাড়া কমবে না। এতে মানুষ কোনো সুবিধা পাবে না। এর চেয়ে ভালো সরকার আয় করুক, যাতে পরবর্তীতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে ভর্তুকি হিসেবে দিতে পারে। তবে এ টাকা অন্য খাতে যেন ব্যবহার করা না হয়। সরকার চাইলে অকটেন ও পেট্রোলের দাম কমাতে পারে।’
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে লোকসান হয় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে।